চোখ কেন উঠে ? এর প্রতিকার
চোখ ওঠা চোখের বাইরের সাদা আবরণ বা কনজাংকটিভায় সৃষ্ট প্রদাহবিশেষ৷ তাই একে কনজাংকটিভাইটিস বলে। রোগে চোখ লালচে হয়ে যায় বলে একে পিং আইও বলে। চোখ ওঠা একটি সংক্রামক রোগ৷
★রোগের কারন:
চোখের বহিরাবরণে নানা কারণে প্রদাহ হতে পারে। চোখ ওঠা রোগের কারণ চারটি। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, অ্যালার্জি ও ছত্রাকের আক্রমণ৷ ভাইরাস জনিত চোখ ওঠা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। সবচেয়ে বিরল হলো ছত্রাকজনিত চোখ ওঠা৷
★রোগের ধরন ও লক্ষণ:
চোখ ওঠা রোগের মূল ধরন চারটি।
১. ভাইরাসজনিত চোখ ওঠা (Viral conjunctivitis)
Adenovirus সবচেয়ে বেশি চোখ ওঠা রোগের জন্য দায়ী ৷ হার্পিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস হার্পেটিক কেরাটোকনজাংকটিভাইটিস বেশ মারাত্মক ও গভীর চিকিৎসার দরকার হয় ৷ এছাড়া এন্টারোভাইরাস ৭০ ও কক্সাকিভাইরাস এ২৪ অ্যাকিউট হেমোরেজিক কনজাংকটিভাইটিস রোগ তৈরি করে যা অতি সংক্রামক ৷ ভাইরাসজনিত চোখ ওঠার লক্ষণ:
(১) লাল চোখ,
(২) চুলকানি,
(৩) চোখ দিয়ে প্রচুর পানি পড়া,
(৪) চোখ জ্বালাপোড়া
(৫) চোখ ফুলতেও পারে, নাও ফুলতে পারে ৷
(৬) গলা খুসখুসে, নাক দিয়ে সর্দি ঝরা, ঠান্ডা লাগার লক্ষণ৷
২. ব্যাকটেরিয়া জনিত চোখ ওঠা (Bacterial conjunctivitis)
সাধারণত Staphylococcus aureus, Streptococcus pneumoniae এবং Haemophilus influenzae জাতীয় ব্যাকটেরিয়া চোখ ওঠা রোগ সৃষ্টি করে ৷ এছাড়া সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় সদ্যোজাত শিশু মায়ের জন্মনালিতে (যে পথে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়) ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত হয়ে সদ্যোজাত সন্তানও চোখ ওঠায় আক্রান্ত হতে পারে ৷ একে Neonatal conjunctivitis বলে ৷ ব্যাকটেরিয়া জনিত চোখ ওঠার লক্ষণ:
(১) লাল চোখ,
(২) চোখে অস্বস্তি, জ্বালাপোড়া, খচখচ করা (চোখে কিছু পড়েছে এমন অনুভূতি),
(৩) চোখে প্রচুর পিছুটি জমে ৷ রাতে ঘুমিয়ে পড়লে পিছুটি জমে শক্ত হয়ে চোখের পাতা আটকে যায়,
(৪) চোখ দিয়ে পানি পড়া,
(৫) আলোক ও লেন্সের প্রতি সংবেদনশীলতা
৩. অ্যালার্জি জনিত চোখ ওঠা (Allergic conjunctivitis)
ফুলের রেণু, সুগন্ধি (perfumes), প্রসাধনী সামগ্রী, ধোঁয়া, বাতাসে উড়ে বেড়ানো ধূলাবালি, চোখের ড্রপ ইত্যাদি থেকে অ্যালার্জি জনিত চোখ ওঠা রোগ দেখা দেয় ৷ অ্যালার্জি জনিত চোখ ওঠার লক্ষণ:
(১) চোখে প্রচণ্ড চুলকানি ও জ্বালা পোড়া,
(২) লাল চোখ, চোখের রক্তনালি ফুলে ওঠা,
(৩) সকালে চোখের পাতা ফুলে ওঠে,
(৪) পিছুটি জমা,
(৫) চোখ দিয়ে পানি পড়া,
৪. ছত্রাক জনিত চোখ ওঠা (Fungal conjunctivitis)
এটি খুবই দুর্লভ রোগ ৷ Candida গণের বিভিন্ন প্রজাতির ইস্ট জাতীয় ছত্রাক এ রোগের জন্য দায়ী ৷ এটি বিভিন্ন খাবারে যে 'ইস্ট' নামক ছত্রাক ব্যবহার করা হয় সেটি নয় ৷ ছত্রাকজনিত চোখ ওঠার লক্ষণ:
লাল চোখ, চোখ দিয়ে পানি পড়া, অস্বস্তি, চুলকানি ৷
রোগ যেভাবে ছড়ায়
অনেকে বলেন যে চোখ ওঠার রোগীর আক্রান্ত চোখ দেখলেও নাকি এ রোগ ছড়ায় তাই রোগীকে কালো চশমা পরতে বলা হয় ৷ চোখের সুরক্ষার জন্য (রোগের কারণে আলোক সংবেদনশীল, ধূলাবালি থেকে রক্ষা) রোগী কালো চশমা পরতেই পারে কিন্তু রোগীর চোখ দেখলে এ রোগ ছড়ায় এমন ধারণা ভুল ৷ চোখ থেকে চোখে তো জীবাণু যাবে না ৷ রোগ ছড়ানোর কারণ:
(১) হাত দিয়ে চোখ চুলকালে বা অস্বস্তির কারণে নাড়াচাড়া করলে হাতে জীবাণু লেগে যাবে ৷ ঐ হাত কারও গায়ে লাগলে, হ্যান্ডশেক করে সেই হাত নিজের চোখে লাগালে (চুলকানো বা অশ্রু ঝরলে মোছা) এ রোগ হবার সম্ভাবনা থাকে ৷
(২) রোগ চোখ চুলকিয়ে কোথাও হাত রেখেছে ৷ সেখানে জীবাণু লেগেছে ৷ ঐ জায়গায় অন্য কেউ হাত রেখে দিলে তার হাতে জীবাণু লেগে যাবে ৷ সেই হাত চোখে লাগালে রোগ ছড়াবে ৷
(৩) চোখের সাজে পুরোনো মেকআপ বা আরেকজনের মেকআপ (যদি মেকআপ সামগ্রি সংক্রমিত থাকে) ব্যবহার করলে এ রোগ ছড়ায়।
★চিকিৎসা:
চোখ ওঠার রোগের সাধারণত চিকিৎসার দরকার হয় না ৷ নিজে থেকেই ১-২ সপ্তাহে সেরে যায় ৷ বেশি অস্বস্তি হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে ৷ তবে হার্পিসের লক্ষণ দেখা দিলে বা অ্যালার্জি জনিত চোখ ওঠায় চিকিৎসার দরকার পড়বে ৷ সদ্যোজাত শিশুদের নিওন্যাটাল কনজাংকটিভাইটিস রোগেও গভীর চিকিৎসার দরকার পড়ে৷
প্রতিকার
রোগটাকে ঠেকানোর সবচেয়ে বড় উপায় হলো হাত ধোয়া ৷ বাড়িতে কারও এ রোগ হলে কোয়ারেন্টাইন পদ্ধতি অবলম্বন করা ৷ চোখের সাজে অন্যের প্রসাধনী ব্যবহার না করা।
No comments