৫ টি অদ্ভুত সামুদ্রিক প্রাণী
মানুষ জয় করছে মহাকাশ, খুঁজে বেড়াচ্ছে দূরদৃষ্টির নতুন নতুন গ্রহ আর নক্ষত্র। ছুটে চলেছে নতুন সব তথ্য এবং বিচিত্র চিন্তাধারার পিছন পিছন।
কিন্তু, সদা চঞ্চল এই মানুষ কি পৃথিবীর পুরোটা আজ পর্যন্ত জানতে পেরেছে? উত্তর হলো: না! মানুষের নিজ গ্রহ নিয়েই অনেক কিছুই জানা এখনো হয়ে উঠেনি, জ্ঞানের সাগর পাড়ি দিতে তার আরো বহুপথ বাকি।
যেমন অতল সাগর মহাসাগর এর কথাই একবার ভাবুন। আসলেও মানুষ সাগর আর তার বিপুলতা সম্পর্কে খুব কম জানে। বিজ্ঞানীদের ধারণা মতে , পৃথিবীর সাগর বা সমুদ্রের শুধু মাত্র ৫% অন্বেষণ করা সম্ভব হয়েছে!
সাগর- মহাসাগরের নিচের জগত- এ যেনো পৃথিবীর বুকে এক অন্য রকম অস্তিত্বের নাম- যার অস্তিত্বের অনেক কিছুই আমরা হয়ত কেবল কল্পনাই করে যাবো। যেমন সুন্দর, তেমন ভয়ঙ্করও বটে। চলুন আজকে আমরা ঘুরে আসি এই বিশালতার জগত থেকে, জেনে আসি এর অদ্ভুত কিছু অধিবাসীদের সম্পর্কে। আজ আমরা জানব সমুদ্র জগতের কিছু অদ্ভুত এবং বিচিত্র প্রাণীর সম্পর্কে!
১. অ্যাংলারফিশ (Anglerfish):
অ্যাংলারফিশ ৩৬,০০০ ফিট গভীর সমুদ্রে বসবাসকারী একটি অদ্ভুত মাংশাসী মাছ, যাদের মাথায় রয়েছে বাঁকানো ল্যাম্পের মত লম্বা উপাঙ্গ, যা তাদের শিকারকে প্রলুব্ধ করে তাদের দিকে আকৃষ্ট করে। তাদের মাথার এই ল্যাম্পের মত উপাঙ্গটি "ইলিসিয়াম" নামে পরিচিত। ইলিসিয়াম আসলে অন্যান্য মাছের পৃষ্ঠীয় পাখনার মতো সমসংস্থ এক অঙ্গ, যা এমন ভাবে অভিযোজিত হয়েছে যাতে এটি তাদের মুখের সামনে বড়শিতে থাকা টোপের মত ঝুলে থাকে। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, কিছু প্রজাতির অ্যাংলারফিশ আছে, যাদের ইলিসিয়ামের আগায় নিজস্ব আলোর উৎস রয়েছে। আলো তৈরির এই ব্যাপারটাকে বলা হয় বায়োলুমিনিসেন্স। ইলিসিয়ামের এই আলো মাছটি সিমবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে তৈরি করে। কিন্তু, বিজ্ঞানীরা এখনো অবদি বের করতে পারেননি এ ব্যাকটেরিয়া ধারণের জন্য মাছটি আসলে কোন জৈবিক প্রক্রিয়া ব্যাবহার করে। যাই হোক, এ মাছটির সম্পর্কে পুরোপুরিভাবে এখনো জানা সম্ভব হয়নি আর তাই জানার চেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে।
রেড হ্যান্ডফিশ সমুদ্র তলদেশের কথিত সবচেয়ে বিরল এবং অদ্ভুত প্রাণী। এমনকি এর চলাচলের ধরনও বেশ অদ্ভুত। যেখানে অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণী সাঁতার কাটে , সেখানে এই প্রাণীটি সমুদ্র তল বরাবর হাটার জন্য তার হাতের মত দেখতে রূপান্তরিত পাখনা ব্যবহার করে। এটি এতই বিরল প্রকৃতির যে মনে করা হয়, এই সমগ্র পৃথিবীতে রেড হ্যান্ডফিশের সংখ্যা মাত্র ২০-৪০ টি। তাই এদের সম্পর্কে এখনো অনেক জানা বাকি রয়েছে।
ভ্যাম্পায়ার স্কুইড নাম শুনেই যেন এর আকৃতি কল্পনা করা যায়। এটি একটি গভীর সমুদ্রের প্রাণী, যা প্রায় ২,০০০-৩,০০০ ফুট সমুদ্রের গভীরে বাস করে। এর এমন নামটি এসেছে ওয়েভিং প্রক্রিয়ার( নিজেকে ঢেকে ফেলা) থেকে- যা দিয়ে এটি নিজেকে সম্পূর্ণ আবৃত করতে পারে এবং এর ভেতরে ঘুরতেও পারে- পুরো একটি ভ্যাম্পারের কালো চাদরের মতো করেই! এটির দেহ মাংসল কাটা দিয়ে আবৃত থাকে। যখন এই প্রাণীটি ঘাবড়ে যায় বা উত্তেজিত হয়ে যায়, তখন এটি শিকারীকে/আক্রমণ কারীকে বিভ্রান্ত করার জন্য নিজের বাহু থেকে এক প্রকার নীল বায়োলুমিনেসেন্ট ঘন শ্লেষ্মা বের করে দেয় এবং ততক্ষণে এটি অন্ধকারে সাঁতার কেটে পালিয়ে যায়।
এটির নাম ঈল এবং দেখতে ঈলের মত হলেও সত্যিই ঈল ভাবলে আপনি ভুল করবেন! এটি আসলে অন্য এক ধরনের মাছ। এর আবাসস্থল সমুদ্রের ১০,০০০ ফুট গভীরে। এদের রয়েছে ভয়ঙ্কর দেখতে দুই সারি দাঁত। এছাড়াও এদের আলাদা এক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যাকে বলা হয় বায়োলুমিনেসেন্স (যা প্রাণীর দেহে নিজস্ব আলোর উৎস তৈরি করে)। পাশাপাশি এরা বেশ শক্তিশালী প্রাণী। গুল্পার ঈল বৃহৎ চোয়ালের দ্বারা নিজের থেকে বড় শিকারকেও সহজে গ্রাস করতে পারে।
এই প্রাণীটির দেখা মিলে সাগরের ৯,০০০ ফুট গভীরে। এটি সমুদ্রের সবচেয়ে গভীরতম অক্টোপাস হিসেবে পরিচিত। এদের মুখের এবং শরীরের গঠন সাগরের অন্যান্য অক্টোপাস থেকে আলাদা এবং দেখতে গোলগাল-কোমল এক প্রাণী মনে হয়। এটির মুখের সাথে একটু ক্ষয়প্রাপ্ত রেডুলা রয়েছে, যা এটিকে শিকারকে মুখ দিয়ে ছিড়ে এবং পিষে ফেলার পরিবর্তে শিকারকে সম্পূর্ণ গিলে ফেলার পথ করে দেয়। এই খাওয়ার বৈশিষ্ট্য গ্রিম্পোটেউথিস প্রজাতির ডাম্বো অক্টোপাসের জন্য অনন্য আর বৈচিত্র্যময়। একটি ডাম্বো অক্টোপাস স্বাভাবিক ভাবে ৩-৫ বছর বেঁচে থাকতে পারে।
প্রথম দেখাতে মনে হতে পারে, সাগরের বুকে এক টুকরো পঁচে যাওয়া পাতা ভাসছে। কিন্তু মনোযোগ দিয়ে দেখলে বুঝা যাবে এটি আসলে পাতা নয় এটি একটি সি ড্রাগন! এদের দেখা মিলে উত্তর ও দক্ষিণ অস্ট্রোলিয়ায় এবং দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার সামুদ্রিক প্রতীক হিসেবে এই প্রাণীটি বিবেচিত হয়। এদের কিছু কিছু প্রজাতি গভীর সমুদ্রের বাসিন্দা। অদ্ভুত ভাবে, পুরুষ সি ড্রাগন রা তাদের লেজের ব্রুড প্যাচে ৩০০ টির মত ডিম জমিয়ে রাখতে পারে এবং পরবর্তী তে সেগুলো নিষিক্ত করে। একটি লিফি সিড্রাগন সর্বোচ্চ ৭.৯ ইঞ্চি অথবা ২০ মিমি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।
আজকের লেখাটি পড়ে আপনাদের কেমন লাগলো তা বলবেন। সাগরের তলদেশের আরো অদ্ভুত প্রাণী সম্পর্কে আপনাদের ধারণা আর মতামত কমেন্ট সেকশনে জানাতে পারেন।
No comments