পৃথিবী থেকে সব মানুষ উধাও হয়ে গেলে কেমন হবে?
আমরা সবাই কমবেশি জীবনের দীর্ঘসময় নানাধরণের চিন্তায় ব্যস্ত থাকি। কখনো ভয়ঙ্কর কিছু নিয়ে চিন্তা করি, আবার কখনো আকর্ষণীয় কিছু নিয়ে৷ আপনি কি কখনো এমন চিন্তা করেছেন যে, আপনি যদি পৃথিবীর শেষ ব্যক্তি হতেন তবে কেমন হতো?
যৌক্তিক ভাবে বলতে গেলে, পৃথিবীর সমস্ত মানুষ একসাথে অদৃশ্য বা হারিয়ে যাবে এমন সম্ভাবনা শূণ্য- যদি না পৃথিবীতে ডাইনোসরদের বিলুপ্তকারী মহাকাশীয় বস্তুগুলোর পুনরায় আগমন না ঘটে! যদি পৃথিবীতে ক্রমাগত জনসংখ্যা হ্রাস পেতে থাকে এবং এই প্রক্রিয়া কয়েক দশক বা শতাব্দী ধরে চলতেই থাকে তবে ফলস্বরূপ হয়তো আপনার সেই ভাগ্য হলেও হতে পারে যে, আপনিই হবেন পৃথিবীর শেষ এবং একমাত্র ব্যক্তি!
আজকের আলোচনায় পৃথিবীর শেষ ও একমাত্র ব্যক্তির অন্তিম পরিস্থিতি নয়, বরং পরবর্তীতে সেই ব্যক্তির করণীয় কি হতে পারে, সে ব্যাপারে ভেবে দেখার চেষ্টা করবো।
সে কি খাওয়া ও পান করার জন্য যথেষ্ট কিছু খুঁজে পেতে পারবে?
পৃথিবীর শেষ ব্যক্তি কি যথেষ্ট আশ্রয় খুঁজে পেতে পারবে?
সবচেয়ে বড় কথা, পৃথিবীর শেষ ব্যক্তি কি জনমানবশূন্য এমন গভীর নির্জনতা সহ্য করতে পারবে?
একটি অ্যাপোক্যালিপটো দৃশ্যকল্প চিন্তা করুন:
চলুন ধরে নেই, স্বাভাবিকভাবে একজন ব্যক্তি সারাদিন পরিশ্রমের পর গভীর রাতে ঘুমাতে যায়- এই ভেবে আজকের দিনের মতোই আগামীকাল সকালে সে জেগে উঠবে অ্যালার্ম বা পরিচিত মানুষের কণ্ঠের শব্দে, আগামীকালও হবে আর সাধারণ দিনগুলোর মতো আরো একটি সাধারণ দিন।
পরের দিন সকাল আসে এবং আর ঘটনাবশত সে দেরিতে ঘুম থেকে উঠলো, ঘড়ির অ্যালার্ম সময়মতো জাগিয়ে তুলতে ব্যর্থ। জানালা খুলে ঘরে আলো আসার ব্যবস্থা করলো সে। একটু জানালার বাইরে তাকাতেই পরিস্থিতি দৃষ্টিকটু লাগতে শুরু করে, সতর্ক করে দেয় কিছু যেন ঠিক আগের মতো নেই! বাতাসের মৃদু কোলাহল আর হঠাৎ হয়তো কোনো শব্দ আসছে কানে। তাছাড়া আর কোনো শব্দ নেই, কথা নেই, চারিদিকে কোথাও কেউ নেই!
সময় যত গড়াচ্ছে, সম্পূর্ণ একা থাকার আশ্চর্য বাস্তবতা তার মনে আঘাত করতে শুরু করেছে। চোখের সামনে এখন এমন একটি পৃথিবী, যার সেই একমাত্র বাসিন্দা-সেই সব! তিনি যা খুশি তা করতে পারেন,আসলে রাজ্য ছাড়াই যে একজন রাজা হয়ে গেছেন রাতারাতি!
এরপরে কী ঘটবে তার অনেকটাই নির্ভর করবে সে ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের উপর। যদি সে আত্মকেন্দ্রিক ধরণের হয়, তবে এই ব্যাপারকে বেশ স্বাভাবিকভাবেই গ্রহণ করবে। কিন্তু, আমরা ভাবছি কিভাবে এমন কল্পনার পৃথিবীতে একজন মানুষকে আরও নিঃসঙ্গ করে তোলা যায়, তাহলে তখন বাস্তবতা কি দাঁড়াবে? সেই মানুষটি কতক্ষণ একা পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে?
প্রথমত, তার বেঁচে থাকার শর্তসমূহ:
প্রাথমিকভাবে, পৃথিবীর শেষ ব্যক্তিকে অবশ্যই প্রিয়জন হারানোর ধাক্কা এবং তীব্র শোকের সাথে মানিয়ে নিতে হবে। কিন্তু একুশ শতকের আধুনিক মানুষ রা কীভাবে এতো দ্রুত একা জীবন যাপনে সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম হবে?
অভিযোজন বিশেষজ্ঞরা যেকোনো পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকতে তিনটি মৌলিক প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন, সেগুলো হল- পানি,
খাদ্য এবং আশ্রয়।
পৃথিবীর শেষ ব্যক্তির আশ্রয় খোঁজা সহজ হবে, কারণ মানবশূণ্য অবশিষ্ট খালি বাসা-ভবনগুলোতে সে আশ্রয় নিতে পারবে। এরপরের মৌলিক প্রয়োজনীয়তা হল খাদ্য। একজন মানুষ গড়ে ছয় সপ্তাহ কোনো খাবার ছাড়াই বেঁচে থাকতে পারে, কিন্তু পানি ছাড়া মাত্র কয়েকদিন বেঁচে থাকতে পারবে । আর, পৃথিবীর শেষ ব্যক্তি হওয়ায় কারণে কারো সুপেয় পানির জোগাড় করা হবে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ- কেননা তখন বিদ্যুতের উৎপাদন আর পানি ব্যবস্থাপনার উপায় থাকবেনা । অন্য মানুষ সবাই গায়েব হয়ে গেলে বিদ্যুৎকেন্দ্রর রক্ষণাবেক্ষনের জন্য তখন কেউ থাকবে না । ফলস্বরূপ, আধুনিক জীবনের সব সেবা দ্রুত কাজ করা বন্ধ করে দেবে। আমাদের বেঁচে থাকা কল্পিত সর্বশেষ ব্যক্তি বাসাবাড়ির ট্যাঙ্কগুলোতে প্রচুর পরিমাণে সঞ্চিত পানির সন্ধান পেতে পারে, তবে সে পানির উৎস হবে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য, কারণ সংরক্ষিত সেই সুপেয় পানি খুব দ্রুত নোংরা হয়ে যাবে।
প্রকৃতপক্ষে, আমাদের বেঁচে থাকা ব্যক্তিকে, যেকোনো উৎস থেকে পানি পান করার পরিবর্তে, বোতলজাত পানির আশ্রয় নিতে হবে। যদি পৃথিবীর শেষ ব্যক্তি একটি সুপারমার্কেটে প্রবেশ করতে সক্ষম হোন, তাহলে সেখানে হাজার হাজার লিটার বিশুদ্ধ পানির উৎস পেয়ে যেতে পারেন। পানযোগ্য পানি ছাড়াও তাকে সংরক্ষিত খাদ্য সংগ্রহ করতে পারে। এক্ষেত্রে টিনজাত খাবার সংগ্রহ করা যেতে পারে, যার মধ্যে এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো কয়েক দশক যাবত পুরোপুরি খাবার উপযোগী থাকতে পারে। যাইহোক, তখন তাজা খাবার খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যাবে, কারণ বেশিরভাগ ফল এবং সবজি স্বাভাবিকভাবেই এক বা দুই দিনের মধ্যে নষ্ট হতে শুরু করে। রেফ্রিজারেটরগুলোকে শক্তি দেওয়ার মত বিদ্যুৎ না থাকায়, হিমায়িত খাবারগুলো একইভাবে নষ্ট হতে শুরু করবে। আমাদের কল্পিত বেঁচে থাকা ব্যক্তি যদি তারপরেও তাজা খাবারের স্বাদ নিতে চায়, তাহলে তাকে শিখতে হবে- কীভাবে ফসল ফলাতে হয় আর সংগ্রহ করতে হয় এবং কীভাবে শিকার করতে হয়।কারণ, কেবল শিকার আর ফলনই পারে তাকে তাজা মাংসের আর শস্যের স্বাদ নেওয়ার সুযোগ দিতে।
নতুন দক্ষতা শেখা:
সুতরাং যদি আমাদের কল্পিত বেঁচে থাকা ব্যক্তি ভূমি থেকে কীভাবে ফসল ফলাতে হয় তা শিখতে চায়, তাহলে কী হবে? কীভাবে এ সে সম্পর্কে জানতে পারবে? তাকে তখন চাষাবাদ আর ফলন সম্পর্কে বিষদ জ্ঞান আহরণ করতে হবে। তবে আরেকটা সম্ভাবনার কথা বলা দরকার। এমন অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে মাছ ধরার বড়শি ও অন্যান্য সরঞ্জাম মজুত করা আছে, তাই মাছ ধরা এক উপায়ে শস্য ফলনের থেকে সহজ হবে। তবে অবশ্যই, সফলভাবে মাছ ধরা আর পানিতে কেবল একটি বড়শি নিক্ষেপ করা এক কথা নয়। মাছ ধরা সম্পর্কে জানার জন্য সেরা জায়গা কোথায়/ শেখার উপায় কি? কীভাবে আমাদের বেঁচে থাকা ব্যক্তি ভূমি থেকে ফসল উৎপাদন করবে? কীভাবে নিঃশব্দে মাছ ধরবে? কীভাবে পশু শিকার করবে? এমন অনেক প্রশ্ন মনে উঁকি দিচ্ছে, যার ঠিক ঠিক উত্তর আমাদের জানাও নেই।
আমাদের বেঁচে থাকা কল্পিত ব্যক্তির একটি ভাল অস্ত্র যেমন: একটি রাইফেল বা শটগানের প্রয়োজন হবে। তবে, গোলাবারুদের সীমিত সরবরাহ ও অপর্যাপ্ততার কারণে আমাদের কল্পিত বেঁচে থাকা ব্যক্তিকে আধুনিক অস্ত্র বাদ দিয়ে তীর-ধনুক তৈরি শিখতে হবে এবং বর্শা ব্যবহারের দক্ষতাকে আয়ত্ত করতে হবে।
বাস্তবে, আমাদের কল্পনার বেঁচে থাকা ব্যক্তি যদি কঠোর পরিশ্রমী ও দৃঢ় ব্যক্তি না হয়, তবে এই দক্ষতাগুলোকে শুধু আয়ত্ত করতেই তার কয়েক বছর সময় লাগবে। কারণ, বেঁচে থাকা ব্যক্তিকে তখন কেবল বইয়ে থাকা তথ্যের উপর নির্ভর করতে হবে, দুর্ভাগ্যবশত তাকে শেখানোর মতো বা সাহায্য করার মতো কেউ পাশে থাকবে না।
ভবিষ্যত বিবেচনা:
আমাদের কল্পিত বেঁচে থাকা ব্যক্তি যখন একটি নতুন মানবশূণ্য বিশ্বের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়, সময় তখন আস্তে আস্তে কোনো বাধা ছাড়াই অবিরাম চলতে থাকে। দিন থেকে রাত, সপ্তাহ শীঘ্রই মাসে এবং মাসগুলো বছরে রূপান্তরিত হবে। অবিলম্বে রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে মানবসভ্যতার শ্রেষ্ঠতার নিদর্শন -আকাশছোঁয়া দালানগুলো ভেঙে যেতে শুরু করবে। তবে ,অবশ্যই কিছু দালান আছে যেগুলো শতাব্দীর পর শতাব্দী, এমনকি সহস্রাব্দ পর্যন্ত পৃথিবীর বুকে দাঁড়িয়ে থাকবে। পিরামিড, স্টোনহেঞ্জ এবং চীনের মহাপ্রাচীরের মতো চমকে দেওয়ার মতো মনুষ্যসৃষ্ট সৌন্দর্যের নিদর্শনগুলো সভ্যতার প্রাচীন স্বাক্ষর হয়ে থাকবে। সুতরাং, আমাদের আরো আধুনিক নির্মাণগুলোর মধ্যে যেগুলো মাউন্ট রাশমোরয়ার মতো শক্তিশালী সেগুলোও লক্ষ লক্ষ বছরেরও স্থায়ী থাকবে।
যাইহোক, আমাদের বিল্ডিংগুলোর মধ্যে খুব কমই সত্যিকার অর্থে স্থায়ীভাবে নির্মিত। নিয়মিত এবং যত্নশীল রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়া, আমাদের বেশিরভাগ ভবন বৃষ্টি, রোদ এবং তাপের পর্যায়ক্রমিক আক্রমণের শিকার হবে। প্রকৃতপক্ষে, আমাদের বাড়ি যা এতো নিরাপদ বলে মনে হয়, ত্রিশ-চল্লিশ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে সেগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে। দেয়াল আর্দ্রতা শোষণ করবে, যার ফলে সর্বত্র স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ তৈরি হয়ে যাবে। কাঠের জিনিস পঁচে যাবে এবং গাছপালা জানালা-দরজা দিয়ে ভবনের ভেতরে ঢুকবে এবং কংক্রিটের মধ্য দিয়ে জোর করে প্রবেশ করবে। কয়েক দশকের মধ্যে, গাছপালার এমন আক্রমণে আক্ষরিক অর্থে ঘরবাড়িগুলো গাছের প্রভাবপূর্ণ হবে। আগুনও তখন একটি সমান হুমকি। একটি বজ্রপাতের ছোট্ট আগুনও তখন ছড়িয়ে যেতে পারে এবং সে পৃথিবীতে আগুন নেভানোর জন্য ফায়ার সার্ভিস না থাকায় একটি ছোট ঘরের আগুন শহর জুড়ে দাবানলে রূপান্তরিত হতে পারে!
ধ্বংসের শহর থেকে বাঁচতে আমাদের কল্পনার ব্যক্তি তখন গ্রামের দিকে পা বাড়াতে পারেন। তবে গ্রামাঞ্চলও তখন বিপদমুক্ত থাকবে না। সময়ের সাথে সাথে, গবাদিপশু মৃত্যু আর ফসলের পঁচনের ফলে খাদ্য খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। সবকিছু অতি দ্রুত জঙ্গলে পরিণত হতে থাকবে। ফলে আমাদের বেঁচে থাকা ব্যক্তি তার প্রয়োজন মেটানোর জন্য বিপজ্জনক, বিধ্বস্ত শহরগুলোতে আবার ফিরে যেতে বাধ্য হবেন।
তবে ভুলে যাবেন না যে, বিশ্ব তখনও ৪০০টিরও বেশি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আবাসস্থল, যদিও আধুনিক বিশ্বের অনেক পারমাণবিক ক্ষেত্রের মানুষের অনুপস্থিতিতে রক্ষনাবেক্ষণের জন্য স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু, পারমাণবিক জ্বালানির বিপদ ঠিকই আছে, বিশাল কেন্দ্রে জ্বালানি ঠান্ডা রাখার জন্য মানুষ না থাকায়, তাপমাত্রা অনেক দ্রুত বাড়বে, যার ফলে সারা বিশ্বে ক্রমাগত পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটবে, তার বিকিরণ দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়বে! প্রতিটি বিস্ফোরণ হবে একটি চের্নোবিল দূর্ঘটনার সমতুল্য, যার অর্থ এই গ্রহের কিছু এলাকা সম্ভবত কয়েক দশকের জন্য "নো-গো এরিয়া" হয়ে যাবে, কিন্তু চের্নোবিল দূর্ঘটনা আমাদের শিখিয়েছে- অবশেষে, সবস্থানে পরিবেশ পুনরুদ্ধার হবে, কারণ প্রকৃতি আমাদের ধারণার চেয়েও অনেক বেশি স্থিতিস্থাপক।
আবার, স্বাস্থ্যবিধি পালন আমাদের কল্পনার বেঁচে থাকা ব্যক্তির জন্য একটি স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা হবে, যেমনটি ইতোমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তখন বেশিরভাগ পানি পানের অনুপযুক্ত হবে। মনে রাখবেন যে, সারা বিশ্বে স্যুয়ারেজ পাম্পিং স্টেশনগুলো আমাদের নদী এবং হ্রদগুলোকে বর্জ্যমুক্ত রাখা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে। তবে তখন রক্ষনাবেক্ষণ ব্যতীত স্যুয়ারেজ পাম্পিং স্টেশনগুলো কাজ করা বন্ধ করে দিবে, ফলে নদী এবং হ্রদগুলো দ্রুত খুব দূষিত হয়ে উঠবে। আর সংগৃহীত যে কোনো উৎসের পানি পান করার জন্য বিশুদ্ধ করা প্রয়োজন হয়ে পড়বে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় হল জামাকাপড় পরিধান, আধুনিক ওয়াশিংমেশিন ছাড়া জামাকাপড় ধোয়া একটি কোমরভাঙা কাজ হবে। তাই সম্ভবত, সবচেয়ে ভাল হবে যদি আমাদের বেঁচে থাকা কল্পিত ব্যক্তি পরিত্যক্ত ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোতে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং যে পোশাক খুঁজে পায় তা পরিধান করে নেন।
সাধারণ স্বাস্থ্য সুরক্ষা তখন আরেকটি বড় উদ্বেগের বিষয় হবে, যদিও হয়তো সংক্রামক রোগ ধরা পড়ার সম্ভাবনা নেই, তবে একটি সাধারণ কাঁটা বা দূর্ঘটনা মারাত্মক প্রমাণিত হতে পারে, যদি আমাদের বেঁচে থাকা কল্পিত ব্যক্তি নিজেকে ডাক্তারি প্রশিক্ষণের জন্য উপযুক্ত করতে ব্যর্থ হয়। তারপরেও পরিবহনের বিষয় রয়েছে। কিন্তু, তখন রাস্তাগুলো ধীরে ধীরে আগাছায় আবদ্ধ হয়ে পড়ায় শুধু সবচেয়ে শক্তিশালী যানবাহনগুলো রাস্তায় চলতে সক্ষম হবে। ২০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে, রাস্তাগুলো এমনকি সবচেয়ে ব্যস্ত রাস্তাগুলোও গাড়ির চলাচলের জন্য দুর্গম হয়ে যাবে। ৫০ বছরের মধ্যে, প্রায় সর্বত্র গাছগুলোর দ্বারা গহীন জঙ্গল সৃষ্টি হবে, যা হয়তো একসময় মহাসড়ক ছিল!
একা নতুন এক পৃথিবীতে:
এ পর্যন্ত বর্ণিত চ্যালেঞ্জগুলো আমাদের কল্পনারও সবথেকে ন্যূনতম অনুমান, কিন্তু বইয়ের দোকানে এবং লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত লক্ষাধিক বইয়ের তথ্যের বিনিময়ে আমাদের কল্পিত বেঁচে থাকা ব্যক্তির সাহায্যের কোনো অভাব হবে না-যদি সে যথেষ্ট পরিশ্রমী হয়। সে তখন প্রায় প্রতিটি সমস্যায় সাহায্য পাওয়ার মতো পদ্ধতি উপযুক্ত কিছু বইয়ের পাতায় খুঁজে পেতেই পারে। তবে, আমাদের বেঁচে থাকা কল্পিত ব্যক্তির জন্য জীবন কখনো কঠিন এবং কখনো পাশবিক হয়ে উঠবে। তবে, যদি তিনি জীবনযাপন সম্পর্কে বুদ্ধি রাখেন এবং কতিপয় সমস্যা থেকে দূরে থাকেন, তবে আমাদের বেঁচে থাকা কল্পিত ব্যক্তি হয়তো আরামদায়ক জীবনযাপন করতেও পারেন। এমনকি সে যদি চান, তবে একটি বিলাসবহুল জীবন যাপনও করতে পারেন।তখন পৃথিবী হবে তার অবাধ বিচরণ ভূমি, যে কোনো জায়গায় যাওয়ার তার অধিকার থাকবে। সে সম্ভবত পৃথিবীর বিখ্যাত শিল্পীদের সেরা কাজগুলো দেখার জন্য জাদুঘর এবং আর্ট গ্যালারিতে অভিযান চালাতে পারেন, সর্বকালের সেরা গাড়ি চালাতে পারেন এবং সবচেয়ে সুন্দর পোশাক পরতে পারেন।
সত্যি বলুন তো, এমন অদ্ভুত পরিস্থিতিতে আপনি কি বেঁচে থাকতে পারবেন?
আপনি এই নিয়ে কি ভাবছেন?
আপনি যদি পৃথিবীর শেষ ব্যক্তি হতেন, তাহলে কি আপনি বেঁচে থাকতে পারতেন?
No comments