Header Ads

Header ADS

পরিশ্রম করে কি মেধাবী হওয়া যায়?

আমরা সবাই প্রায় সময়ই যখন কারো প্রশংসা শুনতে পাই তখন একটা খুবই কমন কথার সম্মুখীন হই। 'ছেলেটা জন্ম থেকেই ব্রিলিয়ান্ট', 'আরে, ওর তো পড়া লাগে এমনেই পারে।', 'সে জন্ম থেকেই সব পারে।'
আচ্ছা, আপনারা কখনো কি ভেবেছেন যে, 'প্রতিভা' কি জন্মগত নাকি সাধনার ফল? চলুন আজকের এই আর্টিকেলে এই বিখ্যাত সমস্যাটির একটি সমাধান খুঁজে ফেলি!

ব্রিটিশ সাইকোলজিক্যাল সোসাইটির মতে, প্রত্যেকে ব্যক্তিরই ভালো করার সম্ভাবনা রয়েছে। 'প্রতিভাবানরা সকলে শিশু প্রডিজি, সাধারণ মানুষদের থেকে আলাদা একটি জাতি' এমনটি ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হলেও ব্রিটিশ মনোবিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন যে, প্রডিজিদের সাফল্যের রহস্য কোনো সহজাত বুদ্ধিবৃত্তিক উপহারের চেয়ে কঠোর পরিশ্রমেই বেশি নিহিত! এর উদাহরণ অবশ্য ইতিহাসে শত শত পাওয়া যায়।

★ অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, যাকে অনেকেই স্কুলে ব্যর্থ বলে মনে করেছিলেন, তিনি তার পরবর্তী জীবনে কঠোর পরিশ্রম দিয়ে উচ্চ কৃতিত্ব অর্জনকারী ব্যক্তিত্বে পরিণত হোন । বৈজ্ঞানিক বিষয়াবলীতে বেশ আগ্রহী একটি পরিবার থেকে তিনি উঠে এসেছিলেন বটে কিন্তু আইনস্টাইন তার দৃঢ় পরিশ্রমের দ্বারাই সাফল্য লাভ করেছিলেন!

এছাড়াও মোজার্ট, হ্যান্ডেল, জেএস বাখ, বিথোভেন, চোপিন, লিজ্ট, শুম্যান এবং ডেবসিসহ বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সঙ্গীতশিল্পী এবং সুরকারদের প্রায় সকলেই শিশু প্রডিজি ছিলেন না, এমনকি সবচেয়ে সফলতম সুরকাররাও সফলতম একজন হয়ে উঠতে ১০ বছরেরও বেশি সময় কঠোর অধ্যয়ন করেছেন।

'জিনিয়াস এক্সপ্লেইনড' বইটির লেখক প্রফেসর হাওয়ে বলেছেন যে, কার্যত সমস্ত প্রতিভানদেরই উদ্দেশ্য হাসিলের প্রতি দৃঢ়তা ও সাফল্য অর্জনের জন্য শক্তিশালী প্রেরণা ছিল।

★ এক্ষেত্রে আরেকটি বড়সড় উদাহরণ হচ্ছে, লাসজলো এবং ক্লারা পোলগার কীভাবে তাদের তিন কন্যাকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দাবা খেলোয়াড়ে পরিণত করতে তাদের সৃজনশীল প্রতিভার তত্ত্ব ব্যবহার করেছিলেন সেটি। লাসজলো 'ব্রিং আপ জিনিয়াস ( নেভেলজ জেনিট!)' নামে একটি বই লিখেছিলেন, যেখানে তিনি আইনস্টাইন এবং সক্রেটিসের মতো শত শত সৃজনশীল প্রতিভা নিয়ে তার অধ্যয়নের উপর ভিত্তি করে তার তত্ত্বের রূপরেখা দিয়েছেন। তিনি বইটিতে বলেছেন, 'জিনিয়াস কাজ এবং ভাগ্যবান পরিস্থিতির সমান... প্রতিভা তৈরি হয়, জন্ম হয় না'। তিনি তার মেয়েদের দ্বারা তার এই থিওরিটি প্রমাণও করেন।

লাসজলোর মেয়েদের উপর পরীক্ষা একটি সাধারণ ভিত্তির উপর ছিল যা ছিল: 'যেকোনো শিশুর যেকোনো নির্বাচিত ক্ষেত্রে প্রতিভা হওয়ার সহজাত ক্ষমতা থাকে, যদি তাদের তৃতীয় জন্মদিনের আগে তাদের শিক্ষা শুরু করা হয় এবং তারা ছয় বছর বয়সে সেই ক্ষেত্রটিতে বিশেষজ্ঞ হতে শুরু করে।'

পরীক্ষাটি ১৯৭০ সালে শুরু হয়েছিল যেখানে লাসজলো পোলগার সুসানকে (তার প্রথম কন্যা) হোমস্কুল করার এবং তাকে দাবা শেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। দাবা বেছে নেওয়ার কারণ ছিল দাবার একটি পরিষ্কার উদ্দেশ্য থাকে এবং এর একটি সুনির্দিষ্ট র্যাঙ্কিং সিস্টেম বিদ্যমান । লেখালেখি বা অভিনয়ের মতো অন্যান্য ক্ষেত্রে, লোকেরা বিতর্ক করতে পারে যে একজন ব্যক্তি সত্যিকারের বিশ্বমানের কিনা। যাইহোক, দাবা র্যাঙ্কিং সিস্টেম নির্ধারণ করে যে একজন ব্যক্তি বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় কিনা। লাসজলো নিজে একজন মাঝারি দাবা খেলোয়াড় ছিলেন, কিন্তু তিনি তার মেয়েকে খেলায় দক্ষতা বিকাশে সাহায্য করার জন্য কোন কসরত রাখেননি। সুসান খেলার প্রতি আকৃষ্ট ছিল এবং প্রতিদিন নিবিড়ভাবে অনুশীলন করতেন । ৫ বছর বয়সের মধ্যেই তিনি প্রচুর অনুশীলন করতে পেরেছিলেন। পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে সুসানকে তার বাবা স্থানীয় দাবা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করানোর সিদ্ধান্ত নেন যেখানে বেশিরভাগ অংশগ্রহণকারীর বয়স তার বয়সের দ্বিগুণ ছিল।

৫ বছর বয়সেই, সুসান ১০-০ স্কোরে টুর্নামেন্ট জিতে তার সমস্ত প্রতিপক্ষকে পরাজিত করেন ।

১৯৮৪ সাল নাগাদ, ১৫ বছর বয়সে তিনি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় মহিলা দাবা খেলোয়াড় হয়ে ওঠেন। ১৯৮৬ সালে পুরুষদের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য যোগ্যতা অর্জনকারী প্রথম মহিলা ছিলেন তিনি। সুসান একজন গ্র্যান্ডমাস্টারের খেতাবও অর্জন করেন। ১৯৯১ সালে তিনি ইতিহাসের প্রথম মহিলা হিসেবে "The Chess Triple Crown" জিতেছিলেন।

সোফিয়া পোলগার (২য় কন্যা) বিশ্বের ষষ্ঠ শীর্ষ মহিলা দাবা খেলোয়াড় হয়েছেন। তিনি তার বড় বোন সুসানের মতো বেশ কয়েকটি টুর্নামেন্ট এবং পদক জিতেছেন। সোফিয়া "Sack of Rome" নামেও পরিচিত ছিলেন।

১৯৭৬ সালে জন্মগ্রহণকারী জুডিথ পোলগার তিন পোলগার বোনের মধ্যে সর্বোচ্চ ফলাফল অর্জন করেছিলেন। দাবাতে ইতিমধ্যেই দক্ষ দুই বোনের পরে জন্ম নেওয়া জুডিথ স্বাভাবিকভাবেই খেলার পরিবেশে নিজেকে খুঁজে পেয়েছিলেন। জুডিথকে সর্বকালের সবচেয়ে শক্তিশালী মহিলা দাবা খেলোয়াড় হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

জুডিথ ১৫ বছর ৪ মাস বয়সে গ্র্যান্ডমাস্টারের খেতাব অর্জন করেন যা দ্রুততম রেকর্ড ছিল উভয় মহিলা এবং পুরুষ খেলোয়াড়দের জন্য। তিনি মাত্র ১২ বছর বয়সে শীর্ষ ১০০ খেলোয়াড়দের তালিকায় প্রবেশ করা সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় ছিলেন। জুডিথ পোলগারের ট্রফি এবং দাবাতে জয়ের তালিকা অনেক বড়। তার কিছু রেকর্ড আজও অক্ষত রয়েছে। জুডিথ ছাড়া অন্য কোনও মহিলা বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ ইভেন্টের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেনি। তিনিই একমাত্র মহিলা যিনি ২৭০০ ইলো পয়েন্টের স্কোর অতিক্রম করেছেন।

পোলগার বোনেরা সবাই দাবায় বিশ্বমানের ফলাফল অর্জন করেছেন, যার মাধ্যমে ল্যাজলো পোলগার কয়েক দশকের প্রচেষ্টার পরে তার নিজের এবং তার কন্যাদের উপর প্রতিষ্ঠিত পরীক্ষা উভয়েরই তত্ত্বকে সঠিকভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হোন। তার পরীক্ষা মানব শিক্ষার ইতিহাসে সবচেয়ে অসাধারণ পরীক্ষাগুলির মধ্যে একটি বলে গণ্য করা হয় । তিনি বিশ্বাস করেন যে যখন একটি শিশু সুস্থভাবে জন্মগ্রহণ করে, তখন সে একজন সম্ভাব্য প্রতিভা। সে প্রতিভাবান হিসেবে গড়ে উঠবে কি না তা নির্ভর করে তার লালন-পালন এবং তার উপর প্রযুক্ত প্রচেষ্টার উপর।

তাহলে প্রতিভার জন্ম হয় এই তত্ত্বটির প্রচলন বা এর ভিত্তি তৈরিই বা হলো কিভাবে??

এই তত্ত্বটির রূপরেখাটি জনপ্রিয় করেন ফ্রান্সিস গ্যালটন। তিনি দাবি করেন এবং তার বই "হেরিটরি জিনিয়াস"-এ প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে, প্রকৃতিতে প্রতিভাবানরা তৈরি হয় না বরং তাদের জন্ম হয়! তিনি জাতিগত মতাদর্শকে উৎসাহিত করে কিছু জাতি অন্যদের থেকে উচ্চতর এবং তাদের জেনেটিক্স সংরক্ষণ এবং পরিচর্যা করার কথাও বলেন। তবে ১৯১৬ সালে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির লুইস এম টারম্যানের আই-কিউ টেস্ট আবিষ্কারের আগে পর্যন্ত কেউ জানতো না যে প্রতিভাবানদের কিভাবে শনাক্ত করতে হবে। ১৯২৫ সালে টারম্যান ১৫৪০ জন শিশুর উপর দীর্ঘমেয়াদী পরীক্ষা করেন যাদের মধ্যে সর্বনিম্ন আই-কিউ স্কোর ছিল ১৪০। টারম্যানের ধারণা ছিল এই উচ্চ আই-কিউ সম্পন্ন শিশুরা ভবিষ্যতে তাদের কর্মক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখবে। ১৯৫৯ সালে টারম্যানের মৃত্যুর ৩ বছর পর " জেনেটিক্স অব জিনিয়াস" নামে এই পরীক্ষার ফল প্রকাশ পায় যেখানে দেখা যায় যে, এই উচ্চ আই-কিউ সম্পন্ন শিশুরা যাদের "টারমাইটস" বলা হতো তাদের মধ্যকার হাতে গোনা কতকজনই সফল হয়েছিল এবং তারা টারম্যানের আশানুরূপ বিজ্ঞানী হয়েছিলেন। তবে টারম্যান জানলে খুবই কষ্ট পেতেন যে, তার পরীক্ষাকৃত শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে সাফল্য লাভ করেছেন যে, তাঁকে তিনি আই-কিউ টেস্টে ফেইল বলে গণ্য করেছিলেন! তিনি হচ্ছেন ট্রানজিস্টরের সহ-আবিষ্কারক উইলিয়াম শকলেই, তিনি পরবর্তী জীবনে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কারও লাভ করেন।

জন্মগত প্রতিভাবানদের একজন ধরা হয়, ইলন মাস্ককে। কিন্তু মাস্ক নিজেই এই দাবি অস্বীকার করে তার কঠোর পরিশ্রমকে তার সাফল্যের জন্য দায়ী করেন। এছাড়াও তিনি কম্পিউটার জিনিয়াস এই বিষয়টির যুক্তি খন্ডন করেন তার মা, তিনি বলেন যে, মাস্ক খুব অল্প বয়স থেকেই কম্পিউটার প্রোগ্রামের প্রতি আকৃষ্ট ছিল যার ফলশ্রুতি তিনি একজন দক্ষ প্রোগ্রামারে পরিণত হোন। আরেক টেকজায়ান্ট বিল গেইটসের স্মার্টনেস বা প্রতিভার জন্য তিনি স্বীকৃতিটা দেন তার বই পড়াকে। বিল গেইটসের বাবাকে এক ইন্টারভিউতে যখন জিজ্ঞেস করা হয় যে,

"আপনি কি জানতেন যে বিল একজন প্রতিভাবান হবেন?"

বলেন: "না আসলেই না, তবে সে নিশ্চিত অনেক বই পড়েছে। অনেক সময় আমাকে তাকে তার বই নামিয়ে রাখতে বলতে হতো যাতে আমরা রাতের খাবার খেতে পারি।"

কাউকে জন্মগত প্রতিভাবান ভাবাটা কি তাহলে সঠিক? আপনার কি মনে হয় প্রতিভাবানরা কি তৈরি হয় নাকি তারা জন্ম নেয়? কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না!

No comments

Featured Post

The Future Space Tourism - 2050

 In the next three decades, human beings will enter the realm of space like never before. This is partly due to the way that public interest...

Popular Post

Powered by Blogger.