চা নাকি কফি!
চা অথবা কফি! এমন একটা পানীয় যা অপছন্দ করে এমন লোক খুব কমই পাওয়া যাবে। চা, কফির উপকারিতা, অপকারিতা, দুটোর মধ্যে কোনটা ভালো বা খারাপ এমন শত শত আর্টিক্যাল আমরা পড়েছি। নতুন কি বা জানার আছে, তাই নয় কি?
আজকে আপনাকে চা কফি নিয়ে এমনকিছু তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করব যা হয়তো আপনি জানেন না বা জানা থাকলেও রিভিশন হয়ে যাক। প্রথমে যদি বলি, সমপরিমাণ চা আর কফি থেকে আমরা কফি নয় বরং চা থেকেই বেশি ক্যাফেইন পাই। মানে কি? তাহলে কি আমরা এতো দিন ভুল জেনে আসছি! কথা না বাড়িয়ে ভালো হয় আমি বিষয়টা একটু বিস্তারিত বলে দিই।
প্রতিমিলিগ্রাম চা পাতায় প্রায় ৩.৫% ক্যাফেইন থাকে আর সমপরিমাণ কফির বিনে থাকে প্রায় ১.১-২.২% মাত্র । এর মানে দাঁড়ায় প্রতি মিলিগ্রামে কফির চেয়ে চায়ে বেশি ক্যাফেইন থাকে। তাহলে আমরা যে তথ্যটা সাধারণত জানি যে এক কাপ কফিতে ১০০-১২০ মিলিগ্রাম আর এক কাপ কালো চা-তে ৩০-৬০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে, এই হিসেবে তো কফিতে ক্যাফেইন বেশি। চা কফি প্রস্তুুিতর ধরনের উপর ভিত্তি করে এমন পার্থক্য হয়। কফি অনেক শক্তিশালী পানীয়, এটা অনেক ঘনীভূত করে তৈরি করা হয় বলে অল্প পরিমাণ কফি থেকে আমরা বেশি ক্যাফেইন পাই। চা থেকেও সমপরিমাণ ক্যাফেইন পেতে পারি, এজন্য আমাদের চা পাতার পরিমাণ বাড়াতে হবে না হয় চা পাতাকে বেশি সময় ধরে ফুটাতে হবে। বেশি ফুটানোতেও আবার একটা সমস্যা আছে, তাহল...
আমরা হয়তো অনেকে ব্যাপারটা জানি না যে, চা তৈরির সঠিক নিয়ম হলো প্রথমে পানি ফুটিয়ে, চুলা বন্ধ করে চা পাতা দিয়ে কয়েকমিনিট রেখে দেয়া। যদি আমরা চা পাতা দিয়েই ফুটাতে থাকি, তাহলে চায়ের আসল পুষ্টিগুণ,স্বাদ , সুগন্ধি নষ্ট হয়ে যায়। সাথে দুধ আর চিনি মিশিয়ে ফুটালে তো অবস্থা আরও খারাপ। যদিও আমাদের দুধ চিনি দিয়ে তৈরি চা পান করতেই পছন্দ। প্রশ্নের উত্তরে আসি, চা বেশিক্ষণ ফুটাতে থাকলে চা পাতা থেকে অতিরিক্ত পরিমাণে ট্যানিন ( যা চায়ের রঙ এবং স্বাদের জন্য দায়ী) বের হয়ে আসে। পরিমিত পরিমাণে ট্যানিন আমাদের দেহের জন্য উপকারী, কিন্তু অতিরিক্ত হলে সেই চা পানে বমি বমি ভাব হতে পারে( বিশেষ করে খালি পেটে চা পানে), পাশাপাশি এটি আপনার শরীরকে কিছু খাবার থেকে আয়রন শোষণের ক্ষমতাকেও বাধা দিতে পারে। এছাড়াও ভেষজ কিংবা ফলের ‘ফ্লেভার’ মিশ্রিত চা অতিরিক্ত ফুটাতে থাকলে তার উপকারী গুণগুলোর অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। পাশাপাশি এই ধরনের চায়ে থাকা উদ্বায়ী যৌগ যেমন এসেন্সিয়াল অয়েল এবং লাবাইল নামক উপাদান উচ্চ তাপমাত্রায় নষ্ট হয়ে যায়।
আমাদের অনেকের চা পুনরায় গরম করে পান করার অভ্যাস আছে। চা-তেও কিন্তু ব্যাক্টেরিয়া জন্মায়। আপনি চা বানিয়ে ১০-১৫ মিনিট রেখে দিলেন, সর্বোচ্চ এটুকু সময় রেখে দেয়া যায়, এতে কোন সমস্যা হবে না। কিন্তু আপনি যদি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ৪ ঘন্টা বা আরও বেশি সময় চা রেখে দিন, তাহলে এই চা আবার গরম করে পান করা একদমই উচিত না। কারণ এতে জন্ম নেয় ফুড পয়জনিং ব্যাক্টেরিয়া, যা পুনরায় চা গরম করলেও মরে না। দুধ চা রেখে দিলে ব্যাক্টেরিয়া আরও তাড়াতাড়ি জন্মাবে। আর যদি মোল্ড জন্মায়, তাহলে বিষয়টা আরও বেশি মারাত্মক হয়ে যায়। এমন চা পানে আপনার পেটে ব্যাথা, ডায়রিয়া, বমি থেকে শুরু করে হজমের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই চা তাজা বানিয়ে খাওয়াই উত্তম।
হারবার চা যেমন বিভিন্ন ফুলের চা,পুদিনাপাতার চা এসব কিন্তু চা নয় কারণ এতে কোন ক্যাফেইন থাকে না। তাই যারা ক্যাফেইন সহ্য করতে পারেন না, এককাপ চা পান করলেই সারারাত জেগে থাকতে হয়, তাদের জন্য হারবার চা একটি দুর্দান্ত পছন্দ। চায়ে থাকে শক্তিশালী ‘ফেনোলিক’ উপাদান যা লড়াই করে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে, সুরক্ষা দেয় হৃদরোগ থেকে। চা যদি চিনি দিয়ে পান করা হয় তবেই সব শেষ। চিনি কম কিংবা চিনি ছাড়া চা পান করতে পারলে এর ‘পলিফেনল’ উপাদানের উপকার পাওয়া যায় সর্বোচ্চ।
চা কফি সম্পর্কে এমন আরও অনেক অজানা তথ্য থাকতে পারে। যদিও চা নিয়েই বেশি লিখে ফেললাম, কফির বাকি তথ্য অন্য একদিন দেয়ার চেষ্টা করব, আজ এইটুকুই থাক। কে কোন তথ্যটা জানতেন আর কোনটা জানতেন না তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু!
No comments