Header Ads

Header ADS

পড়াশোনাতে মনোযোগ ধরে রাখার বৈজ্ঞানিক উপায়!

প্রায় শিক্ষার্থীদেরই সমস্যা থাকে এই একটা ব্যাপার নিয়ে। তা হলো- পড়তে বসি তবে পড়া হয়না। সবার কথা এইটাই। কিন্তু আসলে কতটুকু চেষ্টা করছি আমরা পড়াশোনা করার জন্যে, আদৌ করছি তো? নাকি কেবল চিন্তাই করে যাচ্ছি? 
পড়াশোনা ঠিকমতো না হওয়ায় একটা বিশেষ কারণ হতে পারে- তা নিয়ম মোতাবেক না করা। যার কারণে একঘেয়েমি, অলসতা, পড়া বুঝতে না পারা সহ পরীক্ষাতে ফলাফল খারাপ, হতাশ হয়ে পড়া, কাঙ্ক্ষিত সাফল্য না পাওয়া- এসব সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় আমাদের।
তাহলে, পড়ালেখার সঠিক নিয়ম বা পড়াশোনা করার আসল  টেকনিক-ই বা কোনগুলো? উত্তর হিসেবে একটা বিখ্যাত বইয়ের কথার ভাষ্য বলা যায়।

বইটি হলো MIT থেকে পিএইচডি করা প্রফেসর কেল নিউপোর্ট এর লিখা  'Deep Work ' নামক বই।
তিনিও সেখানে ঠিক প্রয়োজনীয় কাজে মনোযোগ ধরে রাখতে না পারার সমস্যাটা নিয়েই কথা বলেছেন। তিনি বিখ্যাত এই বইটিতে একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণার কথা উল্লেখ করেন, যেখানে আমাদের এ দৈনন্দিন কাজকে ভাগ করা হয়েছে ২টা ধরণে। সেগুলো হলো  "Shallow work" আর ''Deep Work''

Shallow work টা হলো আমরা যে কাজগুলো উদাসীনভাবে করি, যেখানে হয়তো মনযোগ দিচ্ছি বলে মনে হলেও আসলে তা হয়ে থাকে না। যেমন: পড়ার সময় এটা-সেটা অন্য জিনিস নিয়ে ভাবলে পড়াশোনা টাও Shallow work এর মতো হয়ে যায়। আরো বলা যায়- এক বিষয় পড়ার সময় অন্য বিষয়ের কোনো টপিক পড়তে বাকি থেকে গিয়েছে কিনা তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যাওয়া। কিংবা, সবচেয়ে বেশি করা ভুলটি হলো- পড়ার মাঝে মোবাইল ফোনে/কম্পিউটারে কোনো বার্তা বা নোটিফিকেশন আসলে তা দেখে পড়াশোনা বাদ দিয়ে ফোন ব্যবহার শুরু করা। উপরের প্রতিটা কাজই পড়াশোনা সহ অন্যান্য সূক্ষ্ম কাজের মনযোগ নষ্ট  করে দেয়। এমনকি এমনটাও বলা হয় যে, একবার কাজ থেকে মনযোগ নষ্ট হলে তা আবার ফিরিয়ে আনতে প্রায় ২৫ মিনিট সময় লেগেই যায়! কারণ, মস্তিষ্ক তখনও বাইরের অপ্রাসঙ্গিক কাজের ব্যাপারে করা চিন্তাগুলো থেকে বের হয়ে আসতে পারেনা। তখন এমন পরিস্থিতিতে আধঘন্টার কাজও সম্পন্ন করতে ২ থেকে ৩ ঘন্টা সময় লেগে যায়, মস্তিস্কের এ অবস্থাকেই বলা হয়  "এটেনশন র‍্যাসিড্যু", Attention Residue। তাহলে আসল কথা হচ্ছে, পড়াশোনার সময় অন্যান্য কাজ/বিষয় নিয়ে ভাবতে বসবেন না আর ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে নিজেকে অনেক অনেক দূরে রাখবেন!!

এখন, তাহলে Deep work টা কি? Deep work হলো, মোটকথায় যে কাজটা নিয়েছেন বা শুরু করেছেন- তাতেই আপনার সবর্স্ব দেয়া। অন্য কোনো কাজ বা চিন্তা বন্ধ রাখা। নিজেকে শুধুই ঐ কাজটাতেই ব্যস্ত রাখা। এতে তখন আপনার মস্তিস্ক এমনভাবে কাজ করা শুরু করবে, মস্তিষ্ক এমনটা ধারণা করবে যে- তাকে এখন এই কাজটাই ঠিকভাবে করতে হবে, অন্য কোনো কাজ নেই- কেবল এটাই সময়ের মধ্যে সঠিকভাবে শেষ করতে হবে। Deep work এর কিছু সময় পর আসলেই আপনি লক্ষ্য করবেন,  কত কম সময়ে আর কত সুন্দর করে কাজটি আপনার শেষ হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় ধরে Deep work চর্চা করলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাও অনেকগুণে বেড়ে যায়।
তাছাড়া, আরো কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণাতে আলোচিত কিছু কাজ রয়েছে, যেগুলোর চর্চা করলে পড়াশোনায় মনযোগ ধরে রাখা আরো সহজ হয়ে যায়। 

পড়ার সময় নিজের জন্যে একটা ভালো জায়গা বেছে নেওয়া- যা হবে কোলাহল মুক্ত এবং মনযোগ নষ্ট করে- এমন বস্তু হতে সম্পূর্ণ ভাবে মুক্ত। যাতে পড়ার পরিবেশ আরো সুন্দর হয়, আশেপাশে এমন সজ্জা করলেও মন্দ হয়না। যেমন: পড়ার টেবিলের পাশে কিছু শর্ট স্টিকি নোটসগুলো আটকে রাখা যায়, কিছু রঙিন কলম আর মার্কার পেনস রাখা যায়। অপ্রয়োজনীয় জিনিস বিশেষ করে ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো দূরে রাখা। তাহলে হয়ে গেলো আপনার মনোরম আর মনোযোগ ধরে রাখার পড়ার জায়গা।

পড়তে তো বসতেই হবে, তবে তার আগে দরকার একটু মেডিটেশন, তা হতে পারে আপনার পছন্দ মতো উপায়ে।  যাতে মস্তিস্ক একটু শান্ত হয় আর একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজে যে এখন সময় দিতে হবে তার জন্যে প্রস্তুত হয়। 

আরেকটা খুবই বিখ্যাত পদ্ধতি  হলো
"পমোডোরো মেথড"। যার অর্থ, ধীরে ধীরে কোনো কাজ শুরু করে মাঝে অল্প বিরতি দিয়ে কাজের দ্রুততা আস্তে আস্তে বাড়ানো। বিষয়টি বুঝুন, কেউ প্রথমে পড়তে বসে যদি ভাবে অনেক বেশি পড়া একসাথে পড়ে ফেলবে, আসলে তা আর হয়ে ওঠেনা। তাই, অল্প অল্প করে পড়া আরম্ভ করে পরবর্তীতে পমোডোরো মেথড অনুসরণ করলে পড়াশোনায় গতি আর প্রক্রিয়াতে অনেক উপকার হয়ে বলে জানা যায়।

আরেকটি গবেষণায় জানা যায়, সঠিকভাবে পড়াশোনা করার একটি পদ্ধতি হচ্ছে, একাধারে ১০-১৪ ঘন্টা মতো অনেক সময় ধরে না পড়ে, সময় ভাগ ভাগ করে নিয়ে পড়ে মাঝে একটা বিরতি নিয়ে  (তা হতে পারে ১০ মিনিট) তারপর আবার পড়তে শুরু করা।
এটা খুবই কার্যকরী বলে প্রমাণিত।

আর, পড়ার সময় গ্লুকোজ মিশ্রিত পানি অথবা সাধারণ পানি হাতের কাছে রাখা আর পান করা ভালো । এটা মস্তিস্ককে হাপিয়ে যাওয়া থেকে রোধ করে।
সবথেকে মজার উপায়ের মধ্যে একটা হলো, ডার্ক চকলেট খাওয়া। কারণ, চকলেটে ফ্লেভেনয়েড থাকে- যা আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া, চকলেটে থাকা ক্যাফেইন (যদিও খুব কম পরিমাণে থাকে) আমাদের মস্তিষ্ককে আবার একটু সজাগ করে তুলে, যা পড়াশোনাতে মনযোগ বাড়াতে যথেষ্ট সাহায্য করে! 

এই হলো কিছু বৈজ্ঞানিক উপায় যার মাধ্যমে আমাদের গতানুগতিক দৈনন্দিন পড়াশোনার নিয়মকে একটু পরিবর্তন করে আমরা আগের তুলনায় মনযোগ বাড়াতে পারি। তো বলুন, উপায় গুলো একবার চেষ্টা করে দেখবেন নাকি?

No comments

Featured Post

The Future Space Tourism - 2050

 In the next three decades, human beings will enter the realm of space like never before. This is partly due to the way that public interest...

Popular Post

Powered by Blogger.