বেবি ওয়াকার – ক্ষতি করছে আপনার বাচ্চাকে !
সাবধান! ছোট শিশুদের হাঁটা শেখাতে বেবি ওয়াকের ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন!
কয়েকমাস আগে আমার পরিবারে একজন ছোট সদস্য আসে, সে জন্মের পরেই "বেবি ওয়াকার" গিফট পেয়ে যায়। এটা খুব স্বাভাবিক বিষয় কারণ বাচ্চার জন্য এটা প্রয়োজনীয় একটা জিনিস। তবে কয়েকদিন ধরে বেবি ওয়াকারকে না বলুন শিরোনামে কিছু পোস্ট দেখে চিন্তায় পড়ে যায়। কেন আমেরিকান একাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স চাকা সহ বেবি ওয়াকার তৈরি ও বিক্রি নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে? কেন বা কানাডা ২০০৪সাল থেকে বেবি ওয়াকার তৈরি, আমদানি, বিজ্ঞাপন বা বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিনেও বেবি ওয়াকার বিষয়ে সতর্কতা রয়েছে। বেবি ওয়াকারকে ডেঞ্জারাস চয়েসও বলা হচ্ছে। এর পেছনে ঠিক কি কারণ আছে, তা জানতে গিয়ে কিছু তথ্য পেলাম যা আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
প্রথমে বেবি ওয়াকারের ৫টি ঝুঁকিপূর্ণ দিক নিয়ে কথা বলি। এক. আপনার বাচ্চা যখন হাঁটার জন্য প্রস্তুত না, কিন্তু হাঁটা শিখতে আপনার হাতের সাহায্যের পরিবর্তে দিয়ে দিলেন একটি যন্ত্র। কৃত্রিম সাহায্য নিয়ে হাঁটতে বাচ্চা ওয়াকারে ধাক্কা দিলে ওয়াকার পিছলে যেতে পারে, যার ফলে তারা মেঝেতে মুখ থুবড়ে পড়ে গিয়ে হাতে, মাথায় আঘাত পেতে পারে। আর যদি আশেপাশে টেবিলের কোণার মতো কোন জায়গায় আঘাত পেয়ে যায় তাইলেতো বিষয়টা আরও মারাত্মক হতে পারে। আশেপাশের সিড়ি দিয়ে যদি সে নামতে শুরু করে, নিশ্চিত পড়ে গিয়ে বাচ্চার হাড় ভাঙ্গতে পারে এবং মাথার মারাত্মক আঘাত হতে পারে।
দুই. এখন আপনি বলবেন আমি বাচ্চার খেয়াল রাখলে তো আর এসব দূর্ঘটনা ঘটবে না। গবেষণা বলে, ওয়াকারে বেশিরভাগ দূর্ঘটনা বাবা মা খেয়াল রাখা অবস্থাই ঘটে। দূর্ঘটনার প্রতি দ্রুত প্রতিক্রিয়া করা শারীরিকভাবে অসম্ভব হতে পারে কারণ বাচ্চা পড়ে গেলে তা বুঝে উঠতেই ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়। ওয়াকারে থাকা একটি শিশু ১ সেকেন্ডে ৩ ফুট দূরত্ব নড়াচড়া করতে পারে, তাই তত্ত্বাবধানে থাকা সত্ত্বেও ওয়াকার নিরাপদ নয়। এই গতিতে, তারা সিঁড়ি বেয়ে, বারান্দায়, দরজার বাইরে পড়ে যেতে পারে। এটি নিয়ন্ত্রণ বা থামানো তাদের জন্য কষ্টকর।
তিন. ওয়াকার দিয়ে একটি শিশু এমনসব জায়গায় পৌঁছাতে পারে যেখানে তারা স্বাভাবিকভাবে যেতে সক্ষম না। যেমন তারা ঘরের একটি অংশে আটকে যেতে পারে, তারা পুল বা বাথটাবে পৌঁছাতে পারে, বা তারা আগুনের কাছেও চলে যেতে পারে। এই সমস্ত ঘটনা কিন্তু ঘটছে। এমনসব দূর্ঘটনা এড়াতে পারেন আপনার সন্তানের জন্য ওয়াকার ব্যবহার না করে।
চার.যদি একটি শিশু ওয়াকারে বসে থাকে, তবে তারা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উঁচুতে থাকে। এর অর্থ হল তারা এমন পদার্থ বা বস্তু যা তাদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে যেমন ঔষধ বা গরম পানীয় এবং টেবিলে রাখা কাঁচের জিনিসের সহজেই নাগাল পায়। এছাড়াও টেবিলে বিছিয়ে রাখা কাপড় ধরেও টান দিতে পারে, এতে টেবিলের সমস্ত কিছু তাদের উপর পড়তে পারে। এটাও একটা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ দিক।
পাঁচ. এটা পড়ে হয়তো আপনার হাসি পাবে কারণ আমরা যে কারণে বেবি ওয়াকার ব্যবহার করি, সে কিন্তু কাজ করে তার বিপরীত। মানে হল বেবি ওয়াকার বাচ্চাকে হাঁটতে সাহায্য করে না বরং স্বাভাবিকভাবে হাঁটার প্রক্রিয়াকে আরও ধীরে করে। কেমনে তা একটু বলি, আপনার বাচ্চা যখন বেবি ওয়াকারের সাহায্যে হাঁটবে সে কিন্তু ওটাতেই অভ্যস্ত হবে। তখন ওয়াকারের সাহায্য ছাড়া সে নিজে নিজে হাঁটতে চাইবে না।
এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটা হল বেবি ওয়াকার শিশুকে একটি অস্বাভাবিক পজিশনে হিপ ও হাঁটুতে ভর দিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখে। এটা শিশুর জীবনে হাঁটার ধরনে প্রভাব ফেলতে পারে এবং শিশুর হিপের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ওয়াকারের কারণে শিশু আঙুলে ভর দিয়ে হাঁটে যা শিশুর পায়ের ভুল মাসলকে শক্তিশালী করে। যা দীর্ঘমেয়াদী পা এবং গোড়ালির সমস্যা সহ ভারসাম্য এবং সাধারণ পেশী এবং জয়েন্টগুলির বিকাশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। স্বাভাবিকভাবে হাঁটা শিখলে শিশু নিজের পায়ের পাতার উপর ভর দিয়ে দাঁড়ায়, প্রয়োজনে বসে আবার উঠে। এতে পায়ের গোড়ালির, হাঁটুর ব্যবহার সঠিক থাকে এবং সে ভারসাম্য বজায় রাখাও নিজ থেকে শিখতে পারে। এছাড়া ওয়াকার ব্যবহার করলে শিশু হাঁটা বা দাঁড়ানোর সময় নিজের পা দেখতে পারে না, যা শিশুর ভিজুয়াল পারসেপশনকেও ব্যহত করতে পারে।
শেষ কথা হল, সে যখন কাজটা সময় হলে নিজে নিজেই পারবে, তখন তাকে সাহায্য করার নামে এতোসব বিপদের মুখে ফেলবেন কেন? তাকে হাঁটতে সাহায্য করতে চাইলে আপনার হাত দিয়ে তাকে সাহায্য করতে পারেন, তাকে হাঁটতে উৎসাহ দিতে পারেন। সবচেয়ে ভালো হয় তার নিজের উপর ছেড়ে দেয়া, সে যখন নিজে নিজে হাঁটা শিখবে তার জয়েন্টে সমস্যা হবে না, পেশীর বিকাশও ঠিক থাকবে, সঠিক ভারসাম্যও বজায় রাখা শিখবে। উপরে বলা এতোসব ঝুঁকিও সহজেই এড়াতে পারবেন। তাই পরামর্শ থাকবে, বেবি ওয়াকারকে আপনার সন্তানের জন্য নিরাপদ চয়েস হিসেবে নিবেন না প্লিজ।
No comments